Positive Psychology 🧠

 🍀গল্লে গল্পে মনোবিজ্ঞান :

Positive Psychology 🧠
রায়সুল সাহেব বিরাট মাপের একজন লেখক। সুখ্যাতি, জ্ঞান আর অর্থবিত্তের এমন মিশেল এখন তেমন একটা দেখা যায় না। মধ্যবয়সী রায়সুল ভাইয়ের ছেলে মেয়েরাও এখন একপ্রকার প্রতিষ্ঠিতই বলা চলে। নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার বলতে যা বুঝায় আর কি। হতাশা, বিষন্নতাহীন একজন মানুষ তিনি। তবে ইদানিং রায়সুল সাহেব কিছু বিষয় নিয়ে খুবই দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় আছেন। উনার কাছে মনে হচ্ছে যে একটা নির্দিষ্ট বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। তার জীবনে দুঃখকষ্ট নেই সেটা যেমন সত্য তেমনি আহামরি আনন্দময় কিছু নেই সেটাও অস্বীকার করা যায় না। জীবনের গতির কোনো উত্থানপতন নেই। স্তব্ধতর কোনো শান্ত পুকুরের মাঝে ডুবে আছেন এমনটাই মনে হতে থাকে রায়সুল সাহেবের। জীবনটা তার কাছে শূন্য মনে হয়। তিনি খুব করে চাচ্ছিলেন আবেগের কাটা টা কিছু হলেও শূন্য পার হয়ে ১,২,৩ করে বাড়ুক। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি তার পরিচিত সাইকোলজিস্ট সজিব আহমেদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চান। সজিব আহমেদ পজিটিভ সাইকোলজির বিষয়টি তার সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, মানসিক অসুস্থতা নিয়েই শুধু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নয়। আমরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি কিভাবে ভালো থাকতে পারি, অন্যকে ভালো রাখতে পারি সেটাই পজিটিভ সাইকোলজির আলোচনার বিষয়। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে রায়সুল সাহেব সে অনুযায়ী চলতে থাকেন। এখন তিনি নিজেকে অনেক বেশি সুখী অনুভব করেন। রায়সুল সাহেব এবারের বই মেলার জন্য"পজিটিভ সাইকোলজি" নামে একটি বই লিখবেন বলে মনস্থির করলেন।
আসুন একটু জেনে নেই পজিটিভ সাইকোলজি কি এবং কেন প্রয়োজন।


🌿 পজিটিভ সাইকোলজি বা ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান কি?

পজিটিভ সাইকোলজিস্ট Peterson (2008) এর মতে, "ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান হলো মানুষের জীবনকে অর্থপূর্ণভাবে উপভোগ করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।"
একটু বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে, পজিটিভ সাইকোলজি হচ্ছে মানুষের আবেগ, আচরণ, চিন্তাভাবনার দুর্বল ও নেতিবাচক দিক পরিহার করা এবং এগুলোর ইতিবাচক ও শক্তিশালী দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করা।

Abstract Word Cloud For Positive Psychology With Related Tags.. Stock  Photo, Picture And Royalty Free Image. Image 16617659.


🌿 পজিটিভ সাইকোলজি কোন কোন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে?
সাধারণত ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মোন্নতি ও মানসিক প্রশান্তির দিকে লক্ষ্য রাখা হয়।এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় তা হলো-
**Positive experiences বা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা। যেমন: আনন্দ, উল্লাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং ভালোবাসাও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা।
**Positive states and traits. যেমন: কৃতজ্ঞতা, সহনশীলতা।
**Positive institutions. এক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্টানে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা হয়।
**তাছাড়া, ব্যক্তির মধ্যে আশাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করা, জীবনলে ভালোবাসতে শেখা, সুখী অনুভব করা, কৃতজ্ঞতা, আত্মোন্নতি, আত্মবিশ্বাস, জীবনমানকে উন্নত করা ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়।


🌿 পজিটিভ সাইকোলজির উপকারিতাঃ

ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান আমাদের শেখায় কিভাবে আমরা নিজে এবং আশেপাশের মানুষদেরকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি। ব্যক্তি চাইলেই নিজে একাকী ভালো থাকতে পারবেনা বা ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তার চারপাশের মানুষগুলোকেও ভালো থাকতে হবে। পজিটিভ সাইকোলজি আমাদের শেখায় কিভাবে আমরা এই কাজটা করতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকজন পজিটিভ সাইকোলজিস্টের গবেষণায় কি উঠে এসেছে তা জানবো।
পজিটিভ সাইকোলজি বা ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের প্রভাব ও উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, একজন ব্যক্তির মধ্যে সামান্য কিছু বিষয়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনমানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্যক্তির জীবনে একটু আশার সঞ্চার করা গেলে দেখা যায় কিভাবে তার ইতিবাচক মনোভাব তাকে আত্মোন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।


🌿গবেষণাঃ
°°মানুষ তার জীবনে সুখের চেয়ে অর্থকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অর্থের গুরুত্ব অবশ্যই আছে কিন্তু আমরা যেভাবে বিষয়টা দেখি আসলে তেমন নয়। অর্থবিত্ত অর্জনের প্রতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা বর্জন করলে সেটা আপনাকে খুশী করতে যথেষ্ট। (Akin, Norton, & Dunn, 2009).
°°কৃতজ্ঞতা জীবনে সুখী হওয়ার অন্যতম একটা উপায়। আমরা কোন বিষয়ে ততটাই সুখী হতে পারবো যতটা কৃতজ্ঞতা পরবশতা প্রকাশ করতে পারবো। (Seligman, Steen, Park, & Peterson, 2005).
°°Oxytocin may provoke greater trust, empathy, and morality in humans, meaning that giving hugs or other shows of physical affection may give you a big boost to your overall well-being (and the well-being of others; Barraza & Zak, 2009).
°°যারা মানুষের জন্য নিজের অর্থ সম্পদ খরচ করে তারা নিজেদেরকে মানসিক ভাবে সুখী অনুভব করে। (Dunn, Aknin, & Norton, 2008).
**কর্মক্ষেত্রে পজিটিভ সাইকোলজি অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষণায় পাওয়া যায়-
--পজিটিভ ইমোশন কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
--কর্মক্ষেত্রে পজিটিভ ইমোশনকে অনেক বেশি ছোঁয়াচে হিসেবে বললেও ভুল হবে না। একজন ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তি বা একদল ইতিবাচক কর্মী একটি সংগঠনের উন্নতিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
--একটু ইতিবাচক মনোভাব, ছোট ছোট কিছু কাজই আমাদের খুশির জন্য যথেষ্ট। তাই এই ধরণের ছোট ছোট উদ্যোগ কর্মক্ষেত্রকে আরো বেশি প্রাণবন্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। (Kjerulf,2016).


🌿পজিটিভ সাইকোলজির লক্ষ্যঃ
°°ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক মনোভাব চর্চা।
°°ব্যক্তির ইতিবাচক আবেগ অনুভূতি গুলোর অভিজ্ঞতা লাভ।
°°নিজের শক্তিশালী দিকগুলোকে চিহ্নিত করা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে আত্মোন্নতি ঘটানো।
°°ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য যথাযথ যোগ্যতা অর্জনে অগ্রসর হওয়ার মনোবল সৃষ্টি করা।
°°ব্যক্তির মধ্যে কৃতজ্ঞতা, সহনশীলতা সহ বিভিন্ন মানবিক গুণাবলীর উন্মেষ ঘটানো।
°°পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারা।
°°সর্বোপরি, একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং মানবিক উন্নতি সাধন করা।


🌿পজিটিভ সাইকোলজিতে PERMA মডেলঃ

পজিটিভ সাইকোলজিতে PERMA মডেলটি সুপরিচিত। এই মডেলটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে একজন মানুষ তার জীবনকে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। পজিটিভ সাইকোলজির প্রতিষ্ঠাতা Martin Seligman এই মডেলটি উপস্থাপন করেন। এখানে PERMA লিখতে ব্যবহৃত প্রতিটি অক্ষর ইতিবাচক মনোভাবের এক একটি দিক তুলে ধরেছে। যেমন-

Huanui College | Positive Education


**P – Positive Emotions: যদিও শুধুমাত্র ইতিবাচক আবেগের মাধ্যমে আপনার সার্বিক উন্নতি নির্ধারিত হয় না তথাপি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

**E – Engagement: আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময় একটা কাজ এত মনোযোগের সাথে করি যে কতটা সময় অতিবাহিত হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল থাকেনা। আমরা যদি যেকোনো কাজ এমন মনোযোগের সাথে করতে পারি সেটাই হবে আমাদের মানসিক উন্নতি সাধনের অন্যতম একটি সিড়ি।
**R – (Positive) Relationships: মানুষকে বলা হয় Social being বা সামাজিক জীব। সমাজে একে অপরের সাথে ইতিবাচক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের উন্নতি সাধনের অন্যতম একটি উপায়। এর মাধ্যমে আমরা যেমন সামাজিক স্বীকৃতি পাবো তেমনি আত্ম উন্নয়নের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারবো।
**M – Meaning: আত্ম উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বাধা সেটা হলো জীবনকে ও কাজকে অর্থপূর্ণ মনে না করা। আমরা এত উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করি যে অনেকসময় তা আমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। জীবনকে অর্থপূর্ণ করার জন্য ছোটো ছোটো লক্ষ্য নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া এবং নিজেকে মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরী।
**A – Accomplishment / Achievement: যখন আমরা সাফল্য লাভ করি, আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই এবং আত্মোন্নতি ঘটাতে পারি তখন আমরা নিজেদেরকে প্রকৃত সুখী মনে করি। আমাদের ইতিবাচক মনোভাব গঠনের অন্যতম একটি বিষয়ই হলো সাফল্য অর্জন বা লক্ষ্য পূরণ।
আমরা অনেক সময় ভেবে পাই না আমাদের সমস্যাটা আসলে কোথায়। আমার মানসিক ব্যধি নেই, ডিপ্রেশন নেই, অভাব নেই তবুও কেন যেন মনে আনন্দ পাই না। শূন্যতা গ্রাস করে নেয় আমাদের। এই বিষয়গুলো থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, প্রয়োজন আবেগের, আচরণের সঠিক মূল্যায়ন। তাহলেই আমরা নিজেরা খুশি থাকবো, কাছের মানুষদেরকেও এই খুশিতে সামিল করতে পারবো। পজিটিভ সাইকোলজির প্রসার আরো বিস্তৃত হোক।


#mindplus


No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.