অন্তমূর্খী (Introvert), বহিমূর্খী (Extravert) & এম্বিভার্ট(Ambivert)

ইন্ট্রোভার্ট (Introvert), এক্সট্রোভার্ট ( Extrovert), শব্দগুলো আমাদের সবার কাছেই অনেক পরিচিত। মাঝে মাঝেই  আমরা এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। তবে এ বিষয়গুলোর সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে কি জানি? অনেকই বিষয় গুলো না জেনেই কারো সম্পর্কে ইন্ট্রোভার্ট বা এক্সট্রোভার্ট বলে অনেক নেতিবাচক  মন্তব্য করে বসেন আবার অনেকে নিজে নিজেই নিজেকে ইন্ট্রোভার্ট ভেবে হাতগুটিয়ে নেন যে তার ভবিষ্যৎ অনুজ্জ্বল অথবা সে অসামাজিক। এই ভুল ধারনা গুলো সম্পর্কে সবাইকে জানানো ও সচেতন করতেই আমার এই লেখার প্রয়াস।


অন্তমূর্খী (Introvert): 

Introvert শব্দটি ল্যাটিন থেকে এসেছে। এটি দুইটি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত।

যেখানে প্রথম অংশের ইংরেজি 'intro' মানে অভ্যন্তরস্ত(inword) এবং দ্বিতীয় অংশের ইংরেজি 'vertere' মানে ঘূর্ণন (turning)। এর বিপরীত শব্দ এক্সট্রোভার্ট। 


🍀সংজ্ঞায়নঃ অন্তমূর্খী(Introvert) ডিকশনারী মতে Introvert describes, a person who tends to turn inward mentally. এককথায় শাব্দিক অর্থ মতে যারা মানসিকভাবে নিজেদের মধ্যেই বেশিরভাগ বিরাজমান থাকে। তবে অনেকেই ভাবেন যে ইন্ট্রোভার্ট মানেই লাজুক, অসামাজিক, অকর্মঠ। আসলে ইন্ট্রোভার্ট মানেই যে লাজুক বা সামাজিক বা অকর্মঠ হতে হবে তা কিন্তু ঠিক নয়। তাই এধরনের ধারনা ভুল।

 ইন্ট্রোভার্ট বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা নিজেদের বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আপন মনে ভাবতে পছন্দ করে। তারা বই পড়া, লেখালেখি, ছবি আঁকাআঁকি এধরনের বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে থাকেন।

ঘটনা ১ঃ ফাহিম  স্কুলের প্রতিদিনের সমাবেশ যোগ দিতে একটি লাইনের মাঝে দাঁড়িয়েছে।সমাবেশের এক পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষক তাকে সামনে ডাকে কিন্তু সে সামনে যেতে চায়না।বারবার ডাকার পরেও সে কিছুতেই আসতে চায় না এতে শিক্ষক রাগ হয়ে তাকে অনেক বেত আঘাত করলো তবুও সে সবার সামনে আসলো না, তার মনে ছিল শুধু অজানা শঙ্কা এবং লজ্জা। 

ঘটনা ২ঃ রাসেল মায়ের সাথে গল্প করছিল।বাসায় কোন এক মেহমান এসেছে।কলিং বেলের আওয়াজ পেতেই সে দৌড়ে তার রুমে গেল এবং দরজা বন্ধ করে দিলো। কয়েকবার আব্বু আম্মু ডাকলেও সে সাড়া দিলো না।আসলে বাইরের লোকজনের সাথে সে খুব একটা মিশতে পারেনা, কেমন জানি একটা লজ্জা লজ্জা ভাব কাজ করে তার। তার এ অনুভূতি কাউকে বোঝাতেও পারেনা।নিজের মাঝেই আছি বেশ তো ভালোই আছি।তার এ মনোভাব সর্বদা মনের মাঝে কাজ করে।তার এধরনের আচরনে বাবা মা খেয়াল ভুলে বলেই বসে ছেলে খুব 'ইন্ট্রোভার্ট'।

কিছুটা অবাক করা মনে হলেও উপরের ঘটনা ২ টির ফাহিম ও রাসেলের মতো পৃথিবীর ২৫-৪০ ভাগ মানুষ অন্তমূর্খী বা ইন্ট্রোভার্ট।তবে প্রকৃতি প্রদত্ত বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ যাদেরকে আমরা 'গিফটেড পারসন' বলে জানি তাদের ৬০ ভাগ মানুষই কিন্তু অন্তমূর্খী বা ইন্ট্রোভার্ট ধরনের। অনেকের বদ্ধমূল ধারনা হলো ইন্ট্রোভার্টরা জীবনে উন্নতি করতে পারেনা। তবে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় যে পৃথিবীর অনেক খ্যাতনামা লেখক,বিজ্ঞানী,সহ অনেক সফল ব্যাক্তিরা ছিলেন অন্তমূর্খী বা ইন্ট্রোভার্ট। অনেকেই ভাবেন যারা লাজুক তারাই ইন্ট্রোভার্ট। আসলে লাজুকতার সাথে ইন্ট্রোভার্টের সম্পর্ক খুব কম বরং মনের ভিতর অন্য জগতের সাথে এর যোগাযোগ বেশি।

🍀অন্তমূর্খী ব্যক্তিদের আচরনঃ 

⭐এরা বলার চেয়ে শুনতে বেশি পছন্দ করে, তাই এরা ভালো মানের শ্রোতা হয়।

⭐ভালো পর্যবেক্ষক হয়ে থাকেন।

⭐নিজের অনুভূতি প্রকাশে এদের রাজ্যের সংকোচ। 

⭐এদের রাগের তুলনায় অভিমানের পরিমানটা অনেক বেশি। 

⭐এরা খুবই গোছালো স্বভাবের।তাদের চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, শার্টপ্যান্ট ইস্ত্রি করা হয়।

⭐কম কথা বলার কারনে অন্য এদের অহংকারী ভাবতে পারেন। অনেক সময় এরা আনস্মার্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

⭐এদের পেন্সিল বক্স থাকে তাতে সর্বদা প্রয়োজনীয় পেন্সিল, কলম,রাবার সাজানো থাকে।

⭐সাধারনত ঘরকুনো,পৃথিবী ঘোরার আনন্দ নেওয়ার চেয়ে বৃষ্টি দিনে লেপ মুড়ি দিয়ে নন ফিকশন পড়া এদের কাছে অনেক বেশি আনন্দের। 

⭐এদের বাসার পড়ার টেবিল,বইপত্র, ঘরের আসবাব সহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র সবসময়ই গোছালো থাকে,তাদের জিনিস পত্রগুলো বন্ধুরা হাত দিলে বা অগোছালো করলে এদের প্রচন্ড বিরক্তি হয়।

⭐এদের কোলাহলময় পরিবেশ খুব অপছন্দের।

⭐IQ টেস্ট,পাযজ গেম ইত্যাদিতে এরা ভালো   হয়।তারা মা- বাবার আদর্শ সন্তান।

⭐এদের বন্ধু সংখ্যা বেশি নয়, এরা বিভিন্ন  সামাজিক অনুষ্ঠানে বিব্রতবোধ করে এবং নতুন লোকজনের সাথে সহজে মিশতে পারেনা।

🍁কারনঃ অন্তমূর্খী বা বহিমূর্খী হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুজে পাওয়া যায়নি।এটি নিয়ে অনেক ভিন্নভিন্ন মতামত রয়েছে। 

অনেকের ধারনা এটি জন্মগত,আবার অনেকে মনে করে পারিপার্শ্বিক বেড়ে উঠার কারনে এগুন গুলো আয়ত্ত হয়। তাই শিশু কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। 

আমাদের ব্রেনের মূল অংশ হলো সেরিব্রাম।একে ডান ও বাম দুভাগে ভাগ করা যায়। যা কর্পাস ক্যালোসাম নামের একটা অংশ দ্বারা পরস্পর যুক্ত। ব্রেনের এদুটি দিক দুটি ভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ও কাজ সংগঠনের কারণ। 

♦বামদিকের অংশ--->‌‌‌ যুক্তি,অংঙ্ক,জাগতিক চিন্তা, ভাষা,তথ্যবিশ্লেষণ ও বিভিন্ন সৃজনশীলতার কাজ নিয়ন্ত্রন করে।

♦ ডানদিকের অংশ ---> মজার জিনিস,সুর,দিবাস্বপ্ন, কল্পনা, রঙ অনুভব ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে।

অর্থাৎ আমাদের মাঝে যে সকল ব্যক্তির ব্রেনের বাম অংশ বেশি সক্রিয় তারা  ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তমূর্খী ধরনের এবং যাদের ব্রেনের ডান অংশ বেশি সক্রিয় তারা এক্সট্রোভার্ট বা বর্হিগামী ধরনের হয়ে থাকেন।

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির 'সাইনেস রিচার্স ইন্সটিটিউটের' মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক বার্নাডো জে কাদুর্সি বলেন,অনেক লাজুক মানুষই সামাজিক হতে চান।কিন্তু নানা রকম দুশ্চিন্তা  এবং

আত্নবিশ্বাসের অভাব তাদের সামাজিক হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে।

🍀বৈশিষ্ট্যঃ

যারা অন্তমূর্খী বা ইন্ট্রোভার্ট ধরনের তারা চিন্তা করা, নিজেদের চিন্তা -ভাবনা ও অনুভূতিতে বিচরণ করতে পছন্দ করে।এর মানে তারা লাজুক না। ইন্ট্রোভার্ট ব্যাক্তিদের সম্পর্কে আমরা ভুল জানি। আমরা ভাবি তারা মানুষের সাথে মিশতে পারেনা বা মিশতে পছন্দ করে না, মিশতে চায় না ইত্যাদি। কিন্তু অন্যদের মতোই ইন্ট্রোভার্ট মানুষ ও অন্যদের মতো নিজেদের পছন্দ মত সার্কলের মানুষের সাথে সময় কাটাতে,কথা বলতে পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকে শিশু কোন পরিবেশ বেড়ে উঠেছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। 

ইন্ট্রোভার্টদের অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন পার্টিতে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসে বসে বই পড়তে বেশি পছন্দ করেন।আবার কিছু ইন্ট্রোভার্ট মানুষ আছে যারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানই বেশি উপভোগ করেন। আপনি নিজেও জানবেন না যে, আপনার সামনের সদালাপী মানুষটি আসলে ইন্ট্রোভার্ট। 

সত্যি কথা বলতে ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের সামাজিক দক্ষতা অনেক ভালো হতে পারে, কিন্তু সেটা কম চোখে পড়ে।তার প্রধান কারণ হলো সামাজিক অনুষ্ঠান, লোকসমাগমে সময় ব্যয় করার চেয়ে এরা নিজের বিভিন্ন সৃজনশীল চিন্তা -ভাবনা করতে  বেশি ভালোবাসে।আর এমনটিও হয় যে ওই ব্যক্তি পার্টিতে ভালো সময় কাটিয়েছেন, সবার সাথে  কথা বলেছেন।কিন্তু একটা সময় তার নিজের জন্য রিচার্জ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।   এই সময়টা হলো তাদের দমসংগ্রহের বা রিচার্জের সময়। তাই তারা এসময় একটু একা নিরিবিলি থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

ইন্ট্রোভার্টরা মূলত সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার বদলে নিজে একা গান শুনা,টিভি দেখা বা নিজের শখের কাজ গুলো করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। ইন্ট্রোভার্ট রা মূলত কথা বলার আগে সেটা নিয়ে আগে ভালমত ভেবে দেখে তাই রিসপন্স করতে একটু সময় নেয়। এক্সট্রোভার্টদের সাথে এদের মূল পার্থক্যটা এখানেই।


🍀সাফল্যঢাকা অন্তমূখী ব্যক্তিদের উদাহরণঃ যারা নিজেদেরকে ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তমূর্খী ভেবে অনেক সময় হীনম্মণ্যতায় ভোগেন তাদের জন্য এই উদাহরণ গুলো জোগাতে পারে নতুন উৎসাহের পাথেয়। অন্তমূর্খীদের নিয়ে  বিখ্যাত লেখক Frank ocean বলেন 

"Work hard in silence, let your success be your noise."

J.K Rawling (জে. কে রাওলিং) কে তো আমরা কম বেশি সবাই চিনি। হ্যারি পটার সিরিজের লেখক,কিন্তু তিনি পুরোদমে একজন অন্তমূর্খী ধরনের মানুষ। তিনি বলেন এধরনের মানুষেরা নিজেদের চিন্তাধারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে থাকে, নতুন কিছু উদ্ভাবনের উদ্দেশ্য। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে লিখেন, একবার ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে একা ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেন চার ঘন্টার বিলম্ব করে। তাই তিনি একা একা লাউঞ্জে 

বসে আছেন। মনের মধ্যে কিছু একটা জট পেকেছে।নিজের মনের মধ্যে ভাবতে ভাবতে একটা ছোট্ট ছেলের চরিত্র মনে এসেছে। হঠাৎ তার মনে হলো এভাবনা গুলো লিখে রাখা দরকার।কিন্তু তার কাছে লেখার জন্য কাগজ-কলম ছিল না।চাইলেই যে কারো কাছ থেকে কলম নেয়া যেত। কিন্তু লজ্জা আর দ্বিধাগ্রস্তায় তিনি চাইতে পারেন নি।

যদিও পরে তার মনে হয়েছে কলম না চেয়ে ভালোই হয়েছে। 

নিজের মনের ছেলের চরিত্রটি ফুটিয়ে তুললেন।মনের মধ্যে গেঁথে গেল তার চিন্তাটি। আর নিজেকে সেই গল্পের চিত্রনাট্যে উপস্থিত করলেন।নানা ঘাত প্রতিঘাত,বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং কল্পনা রাজ্য নিয়ে তৈরি করলেন সেই হ্যারি পটার সিরিজ এবং সেই চরিত্রটি হলো হ্যারি পটার।

কোটি কোটি সম্পত্তির মালিক ও দীর্ঘদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ট ধনীর তকমা গায়ে জড়ানো Microsoft প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান Bill Gates একজন অন্তমূর্খী মানুষ। শুনতে অবাক হলেও এরকম ব্যক্তি জীবনে সফল হওয়া আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন অন্তমূর্খী। Abraham Lincoln, Albert Einstein,Mark Zuckerberg, Emma Waston,Warren Buffet, Hillary Clinton, Eleanor Roosevelt...এনারা প্রত্যেকেই কিন্তু ইন্ট্রোভার্ট।

বহিমূর্খী (Extravert)

Extrovert শব্দটি ১৯১৮ আধুনিক মনোবিজ্ঞানে প্রথম ব্যবহার করা হয়। শব্দটির দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত। যার প্রথম অংশটি Extra, জার্মান শব্দ থেকে  এসেছে।যার ইংরেজি outward, অর্থ বহিমূর্খ এবং শেষ অংশ vertere, ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। যার ইংরেজি to turn,অর্থ ঘূর্ণন।

এর বিপরীত শব্দ  Introvert (অন্তমূর্খী)


🍀সংজ্ঞায়নঃ Extroverted describes people who look outward rather than toward their inner thoughts. শাব্দিক অর্থ মতে, যারা মানসিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করার চেয়ে বাহ্যিক বিভিন্ন কাজে ব্যস্তসময় কাটায় তাদেরকে বহিমূর্খী বলা হয়।

মনোবিজ্ঞান নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা লেখক ও শিক্ষক কেন্ড্রা চেরির মতে," কথা বলতে ভালো লাগা,সামাজিক কর্মকান্ডে অনেক বেশি কর্মমুখর,সমস্যা সমাধানে সর্বদা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা,অন্যদের কাছে বেশ  আন্তরিক,মিশুক আড্ডা প্রিয় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের অধিকারদেরকে এক্সট্রোভার্ট বা বহিমূর্খী বলে।"

সংখ্যাগত দিক দিয়ে পৃথিবীতে বহিমূর্খীদের সংখ্যা অন্তমূর্খীদের থেকে বেশি। প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ বহিমূর্খী। আর সর্বস্তরে এই বহিমূর্খীদের নিয়ে মাতামাতা। 

 💢আচরণ 

⭐এরা কথা বলায় বেশ পছন্দ করে।

⭐এরা গুছিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারর্দশী।

⭐এরা আড্ডা জমাতে দক্ষ।

⭐এদের বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেশি হয়।

⭐এদের জামা কাপড়, চুল কিছুটা অগোছালো ধরনের হয়। 

⭐দুষ্টুমী কাজে এরা অগ্রগামী থাকে।

⭐এরা দিবাস্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।

⭐খেলাধুলা,ছবি আঁকা,গানবাজনায় এরা ভালো হয়।

⭐যেকোনো পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে এরা বেশ সক্ষম।

⭐বিনোদন প্রিয়।

💢বৈশিষ্ট্যঃ  

মুদ্রার একপিঠে ইন্ট্রোভার্ট আর অন্য পিঠে এক্সট্রোভার্ট, তাই দুইয়ের মধ্যে অহি নকুল সম্পর্ক লেগে আছে সর্বদা।যারা ইন্ট্রোভার্ট বা  অন্তমূর্খী তারা এক্সট্রোভার্ট বা বহিমূর্খীদের সর্বদা এড়িয়ে চলতে চায় এবং তাদের কাজে বিরক্তি পোষণ করে।অন্তমূর্খীরা তাদেরকে 'এটেনশন সিকার 'বলে মনে জায়গা করে নেওয়া ব্যাক্তিরাই মূলত বহিমূর্খী।

ক্লাসে যে বাকপটু, বন্ধুমহল কিংবা শিক্ষকদের সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলা,শিক্ষকদের পছন্দের পাত্র,চাকরি ক্ষেত্রে সহকর্মীদের পিছনে ফেলে  সবচেয়ে চনমনে কাজে এগিয়ে থাকা কিংবা বসের মনে জায়গা করে ব্যাক্তিরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্র বহিমূর্খী।

বহিমূর্খী মানুষের একটা মজার বৈশিষ্ট্য হলো এরা পরিচিত বন্ধুদের পাশাপাশি অপরিচিত মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে।এরা খুব দ্রুত ভাব জমাতে পারেন।তাই সহজেই অন্যদের কাছে পছন্দের পাত্র বনে যান।আড্ডা জমাতে এরা দক্ষ তাই যেকোন আসরকে আনন্দময় করে তুলতে এরা অগ্রগামী।

নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে পারাটা এদের কাছে অন্যতম বিনোদন। যেকোন সামাজিক কর্মকান্ডে এদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়।

কোনধরনের কোন সমস্যার সমাধানে এরা আলোচনার মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন সমাধান বের করে এবং সর্বোৎকৃষ্ট সমাধানটি গ্রহন করে। তবে একা একা থাকাটা এদের কাছে অনেক বড় শাস্তিস্বরুপ।

'বিড়ালের গলায় ঘন্টা পড়াবে কে? '

এধরনের প্রশ্নে বহিমূর্খিরাই এগিয়ে আসে তাই খুব সহজেই অন্যদের কাছে সাদরে সম্ভাষিত হয়।তাদের এধরনের বৈশিষ্ট্যের কারণে সবার কাছে তারা বেশ আন্তরিক হয়ে উঠে।


🌸সাফল্য বিচারে বর্হিমূখীঃ স্বভাবতই Extrovert ধরনের লোকেরা সব ধরনের জায়গায় খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।তাদের এই ক্ষমতাটি অনন্য। বর্তমান পৃথিবীতে এধরনের মানুষেরা সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছেন। এধরনের মানুষেরা খুব ভালো নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন।তাই সাফল্যের হার বেশি।দেশে বিদেশে সবখানেই এদের কদর অনেক। 

এম্বিভার্ট(Ambivert)

Ambivert: ambivert একটি ল্যাটিন শব্দ। সর্বপ্রথম ১৯২৭ সালে আমেরিকার মনস্তাত্ত্বিক কিম্বল ইয়াং এই শব্দটি আবিষ্কার করেন।এই শব্দটি মূলত দুইটি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত।যার প্রথম অংশ ambi যার ইংরেজি অর্থ round about অর্থাৎ চারপাশে, এবং পরের অংশ vartara যার ইংরেজি অর্থ to turnঅর্থাৎ ঘুরানো ঘুরানো। আর এই শব্দটির যে সকল গুণ রয়েছে তাকে বলা হয় Ambiversion এর বিপরীত শব্দ হলো ইন্ট্রোভার্সন এবং এক্সট্রোভার্সন।


🌿সংজ্ঞায়নঃ  Oxford Dictionary মতে A person who has a balance of extrovert and introvert features in their personality.

অর্থাৎ এম্বির্ভার্ট এমন একধরনের মানুষ যারাএকই সাথে এক্সট্রোভার্ট এবং ইন্ট্রোভার্ট (অন্তমূর্খী +বহিমূর্খী) উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য ধারন করে থাকে।তারা অন্তমূর্খী এবং বহিমূর্খী বৈশিষ্ট্যের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে চলে। পরিস্থিতি সাপেক্ষে কখনো অন্তমূর্খী আবার কখনো বহিমূর্খী আচরন প্রকাশকারী মানুষগুলোই এম্বিভার্ট।

অন্তমূর্খী এবং বহিমূর্খীদের নিয়ে আলোচনা বেশ পুরোনো হলেও এম্বিভার্টদের নিয়ে মাতামাতির শুরুটা কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে।বর্তমানে বিশ্বের নামি-দামি গবেষকরাও এটি নিয়ে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং এটি নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলছে।এম্বিভার্ট মানুষেদের জীবনযাপন, আচরন,এবং তাদের আচরনে বিশেষ কোনদিক পরিলক্ষিত হয় কিনা সেগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা হচ্ছে।

🍀 এম্বিভার্ট ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যঃ

🔥প্রচুর পরিমান ভ্রমণ পিপাসু এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন।

🔥এরা স্বাধীনভাবে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

🔥ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

🔥খুব সহজেই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে থাকেন এবং বিশ্বাস ভঙ্গ হলে তা সামলাতে প্রকৃতিগতভাবে প্রস্তুত থাকেন।

🔥নতুন মানুষদের সাথে সামাজিক সম্পর্কে জড়াতে এরা অভ্যস্ত।

🔥একজন এম্বিভার্ট একজন দক্ষ সংগঠক।

🔥কাজের ক্ষেত্রে একাকী কিংবা অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

🔥একই সাথে নানাধরণের মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম।

এছাড়াও আরো কিছু বৈশিষ্ট্য এদের মধ্যে বিরাজমান।

🍀এম্বিভার্ট ব্যক্তিদের আচরনঃ এম্বিভার্ট ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা একই সাথে অন্তমূর্খী এবং বহিমূর্খী ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এম্বিভার্টরা প্রথমে যখন অন্তমূর্খী (ইন্ট্রোভার্ট) বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে অর্থাৎ চুপচাপ একাকী সময় কাটায় এরপর এরা বিরক্ত হয়ে যায়। তারপর এরা বহিমূর্খী (এক্সট্রোভার্ট) বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এরপর  এটাতেও বিরক্ত হয়ে যায়। তাই এধরনের মানুষেরা দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য ধারন করে এবং তৃতীয় আরএকটি চরিত্র প্রকাশ করে থাকে।

ব্রিটিশ মনস্তাত্ত্বিক "Brayan little" এম্বিভার্টদের সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে বলেন এম্বিভার্ট ধরনের মানুষেরা জীবন ধারন করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায়। তারা কখনোই তাদের ব্যক্তিগত জীবনে অন্যদের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। তবে যেকোনো কঠিন সময়ে ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এরা অনন্য।

🎄এম্বিভার্টদের সংখ্যাঃ এম্বিভার্টদের সংখ্যা পরিমান বিষয়ে সুইস মনস্তাত্ত্বিক Robert R.  Makry বলেন 'পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮শতাংশ মানুষ  এম্বিভার্ট।

আমেরিকার মনস্তাত্ত্বিক  Adam M.Grant এম্বিভার্টদের নিয়ে বলেন 'পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এম্বিভার্ট।

(যদিও তার এই মতবাদ নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে)



এম্বিভার্ট ব্যক্তিদের ভালো দিকঃ

অন্তমূখী এবং বহিমূর্খী ব্যক্তিদের মতোই এম্বিভার্ট ব্যক্তিদের বেশকিছু ভালো দিক রয়েছে।

.এরা খুব সহজেই যেকোন জায়গায় নিজের গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করে নিতে পারেন।

.এরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে থাকেন।

.ছোট্ট বয়স থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী, এক্ষেত্রে সময়ের আলোকে যেকোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

. একজন এম্বিভার্ট কাউকে একবার ভালোবাসি বললে হৃদয় উজাড় করে তা দিতে চান।

.একজন এম্বিভার্ট কখনোই দেখবেন না মন খারাপ কিংবা তার হাজার কষ্টে থাকলেও আপনাকে তা বুঝতে দেবে না।অথচ তারা ঠিকই আপনার মন খারাপের খবর নিতেই ব্যস্ত থাকবে।

.একজন এম্বিভার্ট থেকে আপনি সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবেন।

.এরা ভালো শ্রোতা।

.ভালো বুঝাতে সক্ষম।

.কাজের ব্যাপারে এরা খুবই সচেতন।

১০.পরিবারের অন্যযেকোন সদস্যের স্বার্থে আঘাত না করেও একজন এম্বিভার্ট সন্তান  নিজের প্রয়োজন পূরন করে নিতে পারেন।

১১.তারা নাচ গান আবৃত্তি লেখালেখিতে পারদর্শী।

এম্বিভার্টের কিছু খারাপ দিকঃ

এই প্রকৃতির মানুষগুলোর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে

💧এরা সবসময়ই মনে করেন এদের কোন শোভাঙ্ক্ষী নেই।

💧বিশেষকিছু দিকে এরা অগ্রগসর হওয়ায় আশেপাশের অন্যদের হিসেবে হিংসার স্বীকার হন।

💧যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কালক্ষেপণ করে থাকেন

💧বারবার বিশ্বাস ভঙ্গ করলেও একটু মনভোলানো কথায় এরা অন্যজনকে বিশ্বাস করে।

💧কর্মক্ষেত্রে বসকে কৃত্রিম আবেগ দেখাতে না পারায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এরা অবহেলিত থাকেন।

এসকল বৈশিষ্ট্য নিয়েই একজন এম্বিভার্ট মানুষ থাকেন।সর্বপরি এম্বিভার্ট মানুষদের বৈশিষ্ট্য এবং বাস্তব জীবনে এদের বিস্তার বেশ আকর্ষনীয়।

উপরের বৈশিষ্ট্য বা আচরনের সাথে আপনার মিল পেলেন কি কমেন্ট করে জানাবেন। 😊

মোঃমোস্তাকিম রহমান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[তথ্যসূত্র -( Internet, Odhikar.news, www.wsj.com)]

#mindplus

3 comments:

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.