পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কী?
(PTSD) পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার
⭐⭐প্রথমেই মানসিক রোগ ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।🙂
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। যেখানে শারিরীক স্বাস্থ্য নিয়েই রয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব ও কুসংস্কারচ্ছন্ন ভাবনা সেখানে হয়তো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা একপ্রকার বিলাসিতা। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে, একজন মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনধারনের জন্য শারীরিকভাবে যেমন সুস্থ থাকাটা জরুরী ঠিক তেমনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানসিক সমস্যাকে অবহেলা না করে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা জরুরী এবং এর চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে মন থেকে সংকোচবোধ দূর করা উচিত। হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও শারিরীক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকবে এবং আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়তে পারব।😌
⭐এবার চলে আসব মূল আলোচনায়।
⭐পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কী?
পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার সংক্ষেপে 'পিটিএসডি' হলো একধরনের মানসিক সমস্যা যা এমন ব্যক্তিদের মাঝে ঘটতে দেখা যায় যারা অতীতে কোনো ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে থাকে। এর নমুনা হতে পারে কোনো ব্যক্তির করুন মৃত্যু, কোনো আকস্মিক দূর্ঘটনা, দীর্ঘমেয়াদী শারিরীক অথবা মানসিক নির্যাতন, মানসিকভাবে আঘাতজনিত ঘটনা ইত্যাদি।
তবে কিছু কিছু ব্যক্তি এই রোগে কেনো আক্রান্ত হয় সে বিষয়ে সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি তবে ধারণা করা হয় যে বংশগতভাবে প্রাপ্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অথবা বংশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা থাকলে এমনটি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই স্মৃতির ভয়াবহতা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে যার ফলে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধার সৃষ্টি হয়।
পিটিএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভোগে যা তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। কমপক্ষে ১ মাস ধরে এই রোগের লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেয়। এই রোগের শেষ পরিণতিতে ব্যক্তি আত্নহত্যার মতো পথ বেছে নেয়।
প্রতি ১০০ জনে ৭-৮ জন এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা প্রায় দ্বিগুণ।
আশির দশকের গোড়ার দিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধফেরত মার্কিন সৈন্যদের মাঝে প্রথম পিটিএসডি শনাক্ত করা হয়।তখন এটিকে মুলত শেল শক বা ব্যাটল ফ্যাটিগ নামে অভিহিত করা হতো।
⭐রোগের লক্ষণ সমূহ :
◾ ঘটনাটি নিয়ে বারবার দু:স্বপ্ন দেখতে থাকা এবং ভাবনায় ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি হতে থাকা।
◾নিজেকে শারীরিকভাবে আঘাত করতেও দেখা যায়।
◾ নেতিবাচক চিন্তা ও অকারণে ভীতিপ্রদর্শন করার প্রবনতা দেখা যায়। এছাড়াও ওই ঘটনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে থাকে।
◾ মেজাজ খিটখিটে থাকে এবং অল্পতেই রেগে যেতে দেখা যায়।
◾মানুষজন এড়িয়ে চলা ও সর্বদা চুপচাপ থাকা।
◾হ্যালুসিনেশনের শিকার হওয়া।
◾আত্নহত্যার প্রবনতা।
◾এছাড়াও কিছু শারিরীক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।যেমনঃ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ও শরীরে কাঁপুনি আসা।
⭐ চিকিৎসা:
কোন ব্যক্তির মাঝে যদি পিটিএসডির উপর্সগ দেখা
যায় তবে বিষয়টিকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়, সামান্য অবহেলা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টগণ বিভিন্ন সাইকোথেরাপি প্রয়োগ করে থাকেন। যেমনঃ কগনিটিভ বিহেভেয়ার থেরাপি, গ্রুপ থেরাপি, ফ্যামিলি থেরাপি, সাইকোডায়ানামিক থেরাপি প্রভৃতি। তাছাড়াও এন্টিডিপ্রেশেন্ট জাতীয় ঔষধ এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। রোগির নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিবারের পর্যাপ্ত সহায়তা থাকলে এই মানসিক রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
No comments