প্যাথলজিকাল লায়িং কি?

প্যাথলজিকাল লায়িং:

বছর কয়েক আগের ঘটনা। বিল্ডিং এর পরিচিত এক মেয়ের সাথে গল্প করছিলাম। বিষয়বস্তু বিভিন্ন মুভি। সে তার দেখা একটা মুভির গল্প করছিল যেটা আমি তখনো দেখিনি। হঠাৎ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আমার বোন বলে উঠল সে ওই মুভি দেখেছে, তার কাছে খুব ভালো লেগেছে এই, সেই। আমি কিছুটা অবাকই হলাম কারন আমি জানি সে ওই মুভি কখনোই দেখেনি। অথচ আমার সামনেই দিব্যি বলে যাচ্ছে মুভিটা তার কত ভালো লেগেছে!!!
আরেকটা ঘটনা বলি...
আমার কাছের এক বান্ধবী। তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো, আর এটা নিয়ে সে অনেক প্রাউড করত। ভালো কথা!! তখন বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর এর বিয়ে হয় অভিনেতা সাইফ আলী খানের সাথে। ক্লাসের ফাঁকে বান্ধবীরা এটা নিয়েই গসিপ করছিলাম। তখন আমার সেই বান্ধবী বলে উঠে যে, কারিনা কাপুরের বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড নাকি তারাও পেয়েছে, কিন্তু আঙ্কেলের জবের কারনে তারা অ্যাটেন্ড করেনি!! কারিনা কাপুর তাদের কেন ইনভাইট করবে?? কারন তার কাজিন নাকি বলিউডের একজন ডিরেক্টর!!! আমরা ব্যাপারটাতে বিব্রত হলাম, কারন এটা সত্য হবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও ছিলনা।
সাধারনত আমরা এই ধরনের কর্মকান্ডকে "ফাপরবাজি" বলে আখ্যায়িত করতে অভ্যস্ত, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এর একটা নাম আছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে বলে "প্যাথলজিকাল লায়িং" বা অকারনে মিথ্যা বলা।
সমাজে চলতে গিয়ে, নিজেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতি বা বিপদ থেকে বাঁচাতে আমরা অনেকসময় মিথ্যে বলে থাকি। সেই মিথ্যে কথা খুব তুচ্ছ আর প্রভাবহীন হতে পারে। আবার অনেক বড় ও ক্ষতিকর মিথ্যে কথাও বলে থাকে মানুষ। কিন্তু প্যাথলজিক্যাল লায়ারদের ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। প্যাথলজিক্যাল লায়ার কোনো কারণে মিথ্যে বলেন না। এমন নয় যে, তার কোনো সুবিধা হচ্ছে বা সে কোনো সমস্যা থেকে বেঁচে যাচ্ছে মিথ্যে বলার মাধ্যমে। এটি তার স্বভাবজাত। কিছু না ভেবে, কোনো পরিকল্পনা না করেই এ ক্ষেত্রে মিথ্যে বলে তারা। যেটি সামাজিক আবহ ও বন্ধুমহল থেকে তাদের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।


কেন এরকম মিথ্যে বলা?
সত্যিই তো! কোনো কারণ না থাকলে একজন মানুষ কেন শুধু শুধু মিথ্যে বলবে? এতে তার লাভটা কী? এখন পর্যন্ত প্যাথলজিক্যাল লায়িংয়ের কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়নি। হতে পারে এটি কোনো সমস্যার একটি লক্ষণ। আবার হতে পারে যে এটি নিজেই মূল সমস্যা। তবে হ্যাঁ, অন্যান্য অনেক মানসিক সমস্যার সাথে এই প্যাথলজিক্যাল লায়িংকে মিলিয়ে নেওয়া যায়। যেমন: ফ্যাক্টিশাস ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া ইত্যাদি।
লক্ষন :
যদি ভেবে থাকেন যে প্যাথলজিক্যাল লায়িং মানেই অনেক বেশি মিথ্যে বলা, তাহলে সেটা একেবারেই ভুল। একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ার সবসময় মিথ্যে বলেন না। বললেও তাদের মিথ্যায় প্রচুর খুঁটিনাটি থাকে। আপনি যদি চান তাহলে তার দেওয়া তথ্যগুলো ব্যবহার করে সে মিথ্যে বলছে কিনা তাও যাচাই করে নিতে পারবেন। প্যাথলজিকাল লায়াররা সাধারনত মিথ্যা কথা বলে একধরনের মানসিক শান্তি পান, বরং না বলতে পারলেই মানসিক অশান্তিতে ভোগেন।
সমাধান :
এই মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলিং এর অনেক বড় ভূমিকা আছে। অনেকগুলো সেশনের মাধ্যমে তাকে ছোট ছোট সময় বেঁধে দিয়ে ধীরে ধীরে মিথ্যা চর্চায় অনভ্যস্ত করতে পারলে একটা সময় এই রোগ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এছাড়া, একজন মানুষ কেন মিথ্যে বলছেন সেই কারণ কোনোভাবে খুঁজে পাওয়া গেলে তারপরই এই মিথ্যে বলার সমস্যাটিকে যথাযথভাবে দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি পরিবারের সাহায্যটাও খুব জরুরি। একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ারের সাথে কথা বলা বা মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবে, এটা মাথায় রাখুন যে, সে আপনার ক্ষতির জন্য মিথ্যে বলছে না। তাকে ভয় না পেয়ে, তার থেকে দূরে না সরে গিয়ে সাহায্য করুন। এতে করে একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ারও খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।

No comments

Theme images by rami_ba. Powered by Blogger.