(Hysteria)হিস্টিরিয়া কি?
🔷Hysteria(হিস্টিরিয়া)🔷
আমাদের দেশে ভূতে ধরার গল্প শোনেনি এমন ছেলেমেয়ে খুজে পাওয়া দুষ্কর। কম বেশি আমরা সবাই এরকম গল্পের সাথে পরিচিত। প্রচলিত প্রায় সব কাহিনীই কিছুটা এরকম হয়: "আগে তো স্বাভাবিকই ছিল। কিছুদিন ধরে কেমন চুপচাপ থাকে সারাদিন। কারো সাথে কথা বলেনা। হঠাৎ করে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে, অদ্ভুত শব্দ করে মুখ দিয়ে, ওর ভেতর থেকে ভূতটা অদ্ভুত কথাবার্তা বলে। একপর্যায়ে ভূতটা চলে যায় আর ভূতে ধরা ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়।"
জ্বী... বহুল প্রচলিত জ্বীনের আছর বা ভূতে ধরার গল্পের এই প্যাটার্নটি আসলে ভূতুরে কিছুই নয়। এটি একধরনের মানসিক রোগ যা হিস্টিরিয়া নামে পরিচিত। হিস্টিরিয়া মানসিক রোগ হলেও এর Symptoms গুলো Mental না হয়ে Physical হয়ে থাকে। এ কারনে একে Conversion disorderও বলা হয়।
হিস্টেরিয়া শব্দটি এসেছে হিস্টেরা (অর্থাৎ জরায়ু) শব্দ থেকে। আগে ধারনা করা হতো এটি কেবল মহিলাদের রোগ যা জরায়ু থেকে হয়। আসলে এটি মানসিক রোগ নারী পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে হিস্টেরিয়ার নারীরোগীর সংখ্যাই বেশি। সাধারনত ১৬-২০বছর বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে হিস্টিরিয়া বেশি দেখা দেয়।
মূলত প্রচণ্ড মানসিক চাপ, কোনকিছু অপ্রাপ্তি কিংবা কারো Attention না পাওয়া থেকে হিস্টিরিয়ার সূচনা হয়। আমাদের অবচেতন মনের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে বাহ্যিক পরিবেশের সংঘাতের কারনে মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। যেটা থেকে পরিত্রান পেতে আমাদের অবচেতন মনের রাগ, ক্ষোভ বা আবেগ প্রকাশ ঘটে কিছু শারীরিক লক্ষনের মাধ্যমে।
এখন আসা যাক এর উপসর্গে। কি ধরনের উপসর্গ দেখলে বোঝা যায় রোগী হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত।
🔹উপসর্গ
▪কথা কম বলা বা একেবারেই বন্ধ করে দেয়া।
▪পেশিতে দূর্বলতা দেখা দেয়া, অস্বাভাবিক হাটাচলা, অনেকসময় পায়ে কম্পন দেখা দেয়।
▪বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলা।
▪Histerical fainting বা হিস্টিরিয়াজনিত জ্ঞান হারানো।
▪ অকারন হাসিকান্না।
▪একাই প্রলাপ করা বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা।
▪খিচুনী হউয়া এবং অনুভুতিহীন হয়ে পড়া।
▪অনেক সময় ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
🔹হিস্টিরিয়ার কারন:
▪প্রচণ্ড ভয়, দুশ্চিন্তা বা শোক এর কারনে।
▪কোনো প্রকার রাগ বা ক্ষোভ থেকে অথবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারায় উদ্ভুত মানসিক চাপের কারনে।
▪পরিবারের কারো মধ্যে এ রোগের পূর্ব ইতিহাস থাকলে
▪Introvert দের ক্ষেত্রে হিস্টিরিয়া বেশি হয়ে থাকে। যেহেতু তারা তাদের মনের অবস্থা কারো কাছে সহজে প্রকাশ করতে পারেনা, ফলে তাদের মানসিক চাপ সহ্য ক্ষমতার বাইরে গিয়ে হিস্টিরিয়া হতে পারে।
▪মানব মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের সমন্বয়হীনতাও একটি কারন। মস্তিষ্কের ব্যাসাল গ্যাংলিয়া ও থ্যালামাসকে হিস্টিরিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়।
🔹চিকিৎসা:
▪সাইকোথেরাপির বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহার; যেমন: বিহেভিয়ারাল থেরাপি, হিপ্নো থেরাপি।
▪মানসিক চাপের কারনগুলো খুজে বের করে তা থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করা।
▪ওষুধ প্রয়োগ বিশেষ করে এন্টিডিপ্রেশন ড্রাগ ব্যবহার।
সর্বোপরি হিস্টিরিয়ার উপসর্গ কোনো জ্বীনভূতের কারনে ঘটেনা এবং কতিপয় ঝাড়ফুঁক দ্বারা রোগীর উপর অত্যাচার ব্যতিরেক কিছুই হয়না। Hysteria মানসিক রোগ যা সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।
No comments